মাত্র ৫ টাকা দামে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রায় অনেক স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেই ছিল ভর পেট টিফিন।
কিন্তু জানেন কি, কিভাবে শুরু হল সর্বসাধারণের পছন্দের এই বিস্কুটের পথ চলা। আসুন জেনে নি।
মাত্র ১২ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালানো এক ছেলে নিজের পরিশ্রমে তৈরি করেছিল ১৩ হাজার কোটির এই কোম্পানি। সাল ১৯৩৯ পারলে-জির আত্মপ্রকাশ সেই তখন থেকেই। দেশ স্বাধীন হতে তখনও প্রায় বেশ কিছু বছর বাকি। “পার্লে-জি” দেশের স্বাধীনতার থেকেও বেশি পুরনো। সেই তখন থেকেই পার্লের জয়যাত্রা অব্যাহত।
আট দশক ধরে বাজারে এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে পার্লে-জি। আশ্চর্যের বিষয় বহু বছর ধরে পার্লে-জির একটি ছোট প্যাকেটের দাম ছিল চার টাকা। অনেক বছর এই দাম থাকার পর ১ টাকা বাড়ানো হয়। তখন প্যাকেটের দাম হয়ে গেল ৫ টাকা। ১৯৯৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পার্লে-জির ছোট প্যাকেটের দাম ছিল মাত্র চার টাকা। এখন এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারেও এই বিস্কুট মেলে মাত্র ৫ টাকায়।
মুম্বাইয়ের রেশম ব্যবসায়ী মোহনলাল দয়াল তিনি কিন্তু এই গোটা ব্যবসার আড়ালে। এ বিস্কুট তারই মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি ঠিক করেন বেকারির ব্যবসা শুরু করবেন। তবে বললেই তো হুট করে আর শুরু করা যায় না। যন্ত্রপাতি তাছাড়া বিশেষ প্রশিক্ষণ লাগে এবং এইসব জিনিস বানাতে পারে এমন কারিগর দরকার। আর সেই সময় কেক, কুকিজ মানে বিদেশ থেকে আসা খাবার।

তাই মোহনলাল ঠিক করলেন জার্মানি গিয়ে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে আসবেন নিজেই। তারপর শুরু হলো এই বিস্কুটের পথ চলা। পার্লের হাত ধরে বাজারে এলো একেবারে দেশিও উপায়ে তৈরি মিষ্টি গ্লুকোজ বিস্কিট। দেখতেও ভালো দামেও সস্তা এবং স্বাদও ভালো। যা শুরু থেকে সবার মনেই জায়গা করে নেয়। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও তারপর বাধা এসেছিল। কারণ ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইন অনুসারে এই কোম্পানি প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র যুদ্ধে নিযুক্ত সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য এ বিস্কুট তৈরি করার অনুমতি পেয়েছিল এবং দেশীয় ও বিদেশী ব্যবহারকারীদের কাছে এগুলো বিক্রি করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু তারপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা যখন ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিল তখন সবচেয়ে বড় সুযোগটি এসেছিল। আর সেই সময় থেকে তাদের যে এই জয়যাত্র শুরু হয়েছিল তা আর তারপর থামেনি।
স্বাধীনতার পর মোহনলাল তার বিস্কুট গুলোকে যে সাধারণ ভারতীয় গ্রাহকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল শুধু তাই নয় একইসঙ্গে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতার প্রচার বিজ্ঞাপনের জন্য এই বিস্কুটকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল। আর কিছুদিনের মধ্যেই পার্লে-জি পৌঁছে যায় সবার ঘরে ঘরে।
তবে স্বাধীনতার পর বাজারে গমের সরবরাহ ঠিকমতো না হওয়ায় বিস্কুট উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়। যদিও অচিরেই সেই সমস্যার সমাধান হয়। আর তারপর থেকে আজও দৈনিক প্রায় 40 কোটি বিস্কুট এই কোম্পানি উৎপাদন করছে। আজ এত বছরেও স্বাদে ও গুণমানে কোন বদল আসেনি এই বিস্কুটের। আসলে এটা এমন একটা বিস্কুট যা সব জায়গায় সহজেই মেলে। সমাজে আজও এর জনপ্রিয়তা, চাহিদা ভিশন। আর এটাই হল পার্লে-জির সবচেয়ে বড় সাফল্য। লকডাউনে ব্যবসা ধাক্কা খেলেও আবার নিজের মতন করে পথে নেমেছে আমার আপনার সবার প্রিয় পারলে জি বিস্কুট।
আরও পড়ুন- ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা কে জানেন?
[…] আরও পড়ুনঃ- ৯০ এর দশকে সকলের পছন্দের বিস্কুট ছিল “… […]